রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
দীর্ঘ ছুটির পর চালু হয়েছে গণপরিবহন। করোনার সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। শুধুমাত্র ট্রেন ছাড়া বাস, লঞ্চ, টেম্পু, অটোরিকশা সব ধরনের গণপরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। দূরপাল্লার বাসগুলো অর্ধেক যাত্রী তোলা হলেও বাসের ওঠার সময় যাত্রীদেরকে ঠেলাঠেলি করেই উঠতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্যবিধি পালন হচ্ছে কিনা সেটি দেখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনও মনিটরিংও চোখে পড়েনি। যদিও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ দাবি করেছেন, নিয়ম মেনেই বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এদিকে, শর্ত অনুযায়ী দূরপাল্লার কিছু বাস ঢাকা থেকে অর্ধেক যাত্রী তুললেও ঢাকার বাইরে গিয়ে আরও যাত্রী তুলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দূরপাল্লার কোনো কোনো বাসে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও ৮০ শতাংশ এবং কোথাও কোথাও তারও বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
গতকাল দুপুরে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাসগুলোতে অর্ধেক যাত্রী তোলা হচ্ছে। যাত্রীরা একটা আসন খালি রেখে বসছেন। হেলপাররা আগের মতোই যাত্রীদের টানাহেঁচড়া করে বাসে তুলছেন। কোনো কোনো বাসের ছাদেও নেয়া হচ্ছে যাত্রী। এসময় জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়নি। তবে পরিবহন শ্রমিকরা দাবি করেছেন, বাসগুলো আগেই জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।
বলাকা সার্ভিসের চালকের সহযোগী আব্দুল মালেক বলেন, এখনও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাইনি। তাই সেটা নিয়ে বের হতে পারিনি। যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রুটের বাসে ওঠার সময় শত শত যাত্রীকে ভিড় ঠেলে উঠতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে বাসে বসা একজন যাত্রী বলেন, আসন খালি রাখার কথা শুনিনি। বাস চলাচল শুরু হয়েছে এজন্য বাসে উঠেছি। ওই বাসের কন্ডাক্টরের কাছে আসন খালি রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে, যাত্রীদের ভিড় বেশি। আমাদের কী করার আছে।
সকালে রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর ও কলেজগেট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, যত্রতত্র যাত্রী উঠানো ও নামানো হচ্ছে। অধিকাংশ পরিবহনে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবানুনাশক স্প্রে’র ব্যবস্থা। হেলপার কিংবা কন্ডাক্টর টেনে টেনে বাসে যাত্রী তুলছেন সেই পুরাতন অভ্যাসেই।
রজনীগন্ধা বাসের চালক জসিম উদ্দিন বলেন, যাত্রী কম। আমরাও মানুষকে ডাকাডাকি করে পরিবহনে তুলছি না। মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করছি। বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের কেনও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও মালিক থেকে সেটা বুঝে পাইনি। তরঙ্গ পরিবহনের যাত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হয়েছি রামপুরার উদ্দেশ্যে। বাধ্য হয়েই বাসে উঠেছি। আসলে যেসব স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি পালন করা হচ্ছে না। অপরদিকে খিলগাঁও রুটের কয়েকটি বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে। খিলগাঁও এলাকায় মিডলাইন পরিবহনের চালকের সহযোগীর হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে দেখা গেছে। বাসে ওঠার সময় সবার হাতে প্রয়োজন মতো হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। বাসটির ভেতরেও যাত্রীদের আসন ফাঁকা রেখে বসতে দেখা গেছে। এসব বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আজকের সার্বিক পরিস্থিতি অনেক ভালো। যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি পালনের চেষ্টা চলছে। দূরপাল্লার গাড়িগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো হচ্ছে। আমি এবং আমাদের মালিকরা সবস্থানেই তদারকি করছেন। যদিও মহাখালী টার্মিনালের বাইরে তদারকি করার মতো কারও দেখা মেলেনি।
সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই লেগুনা-ইজিবাইক-অটোরিকশায়:
এদিকে, সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না লেগুনা, টেম্পু ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশায়। একজনের অন্যজনের গা ঘেঁষে বসা, মাস্ক-হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার না করার পুরনো চিত্র দেখা গেছে রাজধানীজুড়েই। দেখা গেছে, প্রতিটি লেগুনায় চালকের পাশের আসনে দুইজন। পেছনে দিকে দুই পাশে ছয় জন করে মোট ১২ জন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। জানতে চাইলে পরিচয় প্রকাশ না করে শনিরআখরার একজন চালক বলেন, আমরাও জানি সামাজিক দূরত্ব মানা হয় নাই। কিন্তু কি করার আছে। লেগুনার বডিই ছয় ফুটের। এর মধ্যে তিন ফুট দূরে দূরে লোক বসায় কেমনে? ওই হিসাবে যাত্রী নিতে গেলে এক ট্রিপে চারজনের বেশি যাত্রী নেওয়া যায় না। যাত্রীদের অসাবধানতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কি যাত্রীরে মাস্ক কিনা দিমু?
সদরঘাটে উপচেপড়া ভিড়:
অন্যদিকে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল সোমবার যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকে ৭৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে ও ভিড়েছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ১০ নম্বর পল্টুনে উপচেপড়া ভিড় হওয়ায় সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। এখান থেকে হাতিয়া ও বেতুয়ার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়ে।
দুপুরে সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বিকালের লঞ্চ ধরতে মানুষ দলে দলে টার্মিনালের দিকে হেঁটে চলেছে। কোনও বিধিই মানা হচ্ছে না। বিকেল সাড়ে ৫টায় লঞ্চের সময় থাকলেও যাত্রীরা এসে হাজির হয়েছেন বেলা ১২টায়। সোহরাব হোসেন নামে একজন যাত্রী বলেন, পরিবার নিয়ে যাত্রা করবো বলে এসে এখন দেখি ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নাই। বাবুল নামে এক যাত্রী বলেন, এই ভিড় দেখে ভয় লাগছে। কিন্তু দেশে যেতেই হবে। একটু সাইডে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু এই পল্টুনে এতো মানুষ, আলাদা থাকার কোনও সুযোগই নেই। কর্তৃপক্ষের কোনও দিক-নির্দেশনা আমি গত দুই ঘণ্টায় দেখিনি। মানুষজন সবাই নিজে থেকে সব মানবে এমন ভাবার কোনও কারণ নাই।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটের যুগ্মপরিচালক আরিফ উদ্দিন বলেন, শুধু ১০ নম্বর পল্টুনে যাত্রীদের ভিড় আছে। এখান থেকে হাতিয়া-বেতুয়ার লঞ্চ ছাড়ে। আজ এই দুটো লঞ্চ ৫টা ও সাড়ে ৫টায় ছাড়ার কথা। যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। বাকি পল্টুনগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়েও কম যাত্রী আছে। এই লাইনে যে কয়টি লঞ্চ ছাড়ার কথা তার মধ্যে মাত্র একটি যাবে। ফলে উপচেপড়া ভিড় ঠেকানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বাকি ঘাটগুলোয় কোনও সমস্যা নেই।
উল্লেখ্য, করোনাকালে বাস চালানোর নতুন নির্দেশনা অনুসারে, একজন যাত্রীকে বাসের দুইটি আসনের একটি আসনে বসিয়ে অপর আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লিখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না এবং দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না।
চট্টগ্রামে গণপরিবহন চালুর দিনেই ভাড়া নিয়ে চালক সহকারীদের সাথে যাত্রীদের বাকবিতন্ডা হয়। বেশিরভাগ পরিবহনে ছিলো না স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই। নগরীতে পুলিশের চেকপোস্ট আর সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের কারণে সীমিত যাত্রী পরিবহন করা হলেও মহানগরী থেকে জেলার বিভিন্ন রুটে ছিলো পুরনো চিত্র। দুই মাসের বেশি সময় পর গণপরিবহন চলাচল শুরু হওয়ায় নগরীতে ভিড় জটলা আবার কোথাও যানজট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি। প্রথম দিনে ৭০ শতাংশ পরিবহন রাস্তায় নামে। সিটি বাসগুলোতে চালক সহকারী এবং যাত্রীদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা গেছে। তবে শ্রমিকবাহী বাসে যাত্রী তোলা হয় গাদাগাদি করে।
ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহন সমিতির উদ্যোগে নগরীর মোড়ে মোড়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করা হয়। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমেদ খানের নেতৃত্বে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা টাইগারপাস মোড়ে প্রচারপত্র বিলি করেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি তা দেখা হচ্ছে। এদিকে নগরী এবং জেলার বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া কার্যকর করায় যাত্রীরা ক্ষুদ্ধ। অনেক যাত্রী ভাড়া নিয়ে তর্কে জড়ান।